করোনার গত দুই বছর কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া কম দামে কিনেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ী বা ফড়িয়ারা। তবে এবার একটু বেশি দামেই চামড়া কিনতে হচ্ছে তাদের। রাজধানীতে দাম বেশি হলেও মফস্বলে অনেক কমে বিক্রি হয়েছে চামড়া।
পাশাপাশি কোরবানির গরুর চামড়া কেনা-বেচা বেশি হলেও একেবারেই বিক্রি হচ্ছে না ছাগলের চামড়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরের কোরবানিদাতারা দাম না পেয়ে গরু-ছাগলের চামড়া দান করে দিয়েছেন বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসায়।
রাজধানীর বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, চামড়ার আকার ও অবস্থাভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয়ভাবে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ হচ্ছে।
অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনছেন। ফলে সাভারের আমিনবাজার ও ঢাকার লালবাগের পোস্তা এলাকার আড়তগুলোতে চামড়া বেচা-কেনা অনেক কম। বিগত বছরগুলোতে আড়তে বেচা-বিক্রির যে ধুম থাকে এবার সেই অবস্থাটা নেই।
সূত্র জানায়, সারা দেশেই ঈদের দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। ঢাকার বাইরে গরু-ছাগলের চামড়ার দাম কম হওয়ায় বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন কোরবানিদাতারা।
রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে চামড়া গতবারের তুলনায় এবার একটু বেশি দামেই কিনেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ী বা ফড়িয়ারা।
তবে মফস্বলের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কম দামে গরুর চামড়া কিনলেও ছাগলের চামড়া ফ্রিতেই পেয়েছেন তারা।
এদিকে বিগত বছরগুলোতে আমিনবাজার ও লালবাগের পোস্তা এলাকায় চামড়া বেচা-কেনার ধুম পড়লেও এবার সেখানে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। কারণ আগে ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া আসলেও এখন গরমসহ নানা কারণে আসছে না।
স্থানীয়ভাবেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ট্যানারির মালিকরা সরাসরি বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া কিনছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার অপেক্ষায় থাকলেও পর্যাপ্ত গরুর চামড়া আসছে না। আগে কেনা চামড়া লবণ দিয়ে শেডের নিচে রাখা হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রিকশা-ভ্যানে করে ২৫-৩০টি চামড়া এসেছে বলে জানান তারা।
এছাড়া অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসে বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ব্যাপারী বিনামূল্যেও চামড়া নিতে রাজি হচ্ছেন না। তবে বড় ভেড়ার চামড়া বিক্রি হতে দেখা যায়।
ব্যাপারীরা জানান, ছাগলের চামড়া কিনে প্রক্রিয়াজাত থেকে বিক্রি করা পর্যন্ত যে খরচ হবে, ট্যানারিতে বিক্রি করে তা উঠবে না। তাই ছাগলের চামড়া তারা কিনছেন না। চামড়ার দামে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই এবার সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বর্গফুটে সাত টাকা বাড়িয়ে কোরবানির গরু ও খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এবার ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭-৫২ টাকা। গত বছর ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০-৪৫ টাকা। আর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৪০-৪৪ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩৩-৩৭ টাকা। এবার সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮-২০ টাকা। গত বছর এ দাম ছিল ১৫-১৭ টাকা।
যাত্রাবাড়ী এলাকার কুতুবখালী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা মিলে ২৫০টির বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন। তাদের কাছ থেকে সব চামড়া ৫৫০ টাকা দরে কিনেছেন এক ফড়িয়া। একইভাবে খিলগাঁও বাগানবাড়ি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরাও প্রায় সাড়ে চারশর বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন। তারাও সব চামড়া ৫০০ টাকা দরে এক ফড়িয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
শিক্ষকরা জানান, করোনার সময় তারা কম দামে চামড়া বিক্রি করলেও এবার একটু বেশি দামেই বিক্রি করেছেন। সায়দাবাদ এলাকার একটি নূরানী মাদ্রাসার কোষাধ্যক্ষ মো. রিফাত উদ্দিন বলেন, আমরা ৪৫টি চামড়া সংগ্রহ করেছি। ৬০০ টাকা দরে সবগুলো বিক্রি করে দিয়েছি।
ময়মনসিংহের বড়বন মাদ্রাসাসহ কয়েকটি এতিমখানার শিক্ষকরা জানান, তারা যে দামে গত বছরগুলোতে বিক্রি করেছেন তার থেকে এবার একটু বেশি পেয়েছেন। তবে গরুর চামড়ার দাম পেলেও ছাগলের চামড়া ফ্রিতেই দিতে হয়েছে।
এছাড়াও এবার যে দাম পাওয়ার আশা করেছিলেন সে দাম পাননি বলে অভিযোগ তাদের। কারণ তারা চামড়া ঢাকায় আনার সক্ষমতা নাই। তাই ফড়িয়ারা যে দামে কিনছেন সে দামেই বিক্রি করতে হয়েছে। পোস্তা এলাকার ব্যবসায়ী শুভ বলেন, আগে চামড়া নিয়ে আসা হতো পোস্তায়। কিন্তু এবার কম আসছে। বেচা বিক্রি খুবই কম হচ্ছে।
ফলে চামড়া কম আসছে দেখে ব্যবসায়ীরাই অনেক জায়গায় গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে এনেছেন। গতকাল চামড়ার দাম বেড়েছে। ২০-২৪ বর্গফুটের যেই চামড়া ৭০০-৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটা ৯০০-১০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমিন বাজার এলাকার ব্যাপারী সোহেল বলেন, ক্রেতা কম।
এবার গরুর চামড়া ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে ছাগলের চামড়ার দাম নেই। অনেকেই আমাদের কাছে বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দিয়ে গেছেন। বিগত বছরগুলোতে যে চাপ থাকে সেটা এবার নেই বললেই চলে।।
Leave a Reply